যা আছে বাধ্যতামূলক অবসরের চিঠিতে, সাকলায়েনের করণীয় কী?

Jun 26, 2024 - 19:33
 0  46
যা আছে বাধ্যতামূলক অবসরের চিঠিতে, সাকলায়েনের করণীয় কী?

ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা পরীমণির সঙ্গে সম্পর্কের জেরে পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনকে ‘বাধ্যতামূলক’ অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের কাছে। গেল ১৩ জুন ইস্যু করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে— পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন ও চিত্রনায়িকা পরীমণির মধ্যে ‘অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক’ ছিল। এর দরুন তিনি ‘নিয়মিত পরীমণির বাসায় রাত্রিযাপন শুরু করেন’।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ঢাকায় কর্মরত অবস্থায় নায়িকা পরীমণির সাথে গোলাম সাকলোয়েনের ঘটনাক্রমে দেখা হয় এবং যোগাযোগ আরম্ভ হয়।

মূলত ঘটনার শুরু ২০২১ সালে। সে সময় ঢাকার বোট ক্লাবে বিতণ্ডার জেরে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে চিত্রনায়িকা পরীমণি মামলা দায়ের করেন। তখন বিষয়টি নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে নানা আলোচনার সূত্রপাত হয়। একপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের সাথে পরীমণির জন্মদিন উদযাপন করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সাকলায়েন তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার সাকলায়েনকে সেখান থেকে বদলি করে পাঠানো হয় ঝিনাইদহে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত ছিলেন তিনি।

জানা গেছে, ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে পরীমণি ‘ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টা’ মামলা দায়ের করার পর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে পরীমণির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, মারধর, ভাঙচুর, ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পরীমণিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিছুদিন পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। 

কী আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে?
নায়িকা পরীমণির সঙ্গে ভিডিও ভাইরালের পর বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তাকে বদলি করার পাশাপাশি সাকলায়েনের মোবাইলের তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশের বৈধ আড়িপাতা শাখা বা এলআইসি। তাতে দেখা গেছে— ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে একই বছরের ৪ আগস্ট পর্যন্ত; এক মাস দিনে-রাতে বিভিন্ন সময় নায়িকা পরীমণির বাসায় অবস্থান করেছেন সাকলায়েন।

পুলিশ বিভাগের সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ২৯ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত গোলাম সাকলায়েন এবং পরীমণির ফেসবুক মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথন পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে— তাদের কথোপকথন ‘সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোনো সম্পর্কের নয় বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক।’

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ১ আগস্ট সাকলায়েনের স্ত্রী বাসায় ছিলেন না। এমন অবস্থায় নায়িকা পরীমণি তার রাজারবাগস্থ সরকারি বাসায় যান এবং ১৭ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন।

চিঠির তথ্য বলছে— সাকলায়েন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে; সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমণির সাথে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক হওয়া সত্ত্বেও পরীমণির সাথে তার বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, পরীমণির সাথে জন্মদিন উদযাপন ও নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মতো ঘটনা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। 

এজন্য তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

সাকলায়েনের করণীয় কী?
এ কে এম শহিদুল হক সাবেক পুলিশ প্রধান। তিনি বলেন, পুলিশের প্রথম শ্রেণির কোনো কর্মকর্তাকে যদি ‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’ করা হয়; তখন সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি কর্ম কমিশনের কাছে পাঠানো হয়। তারা ক্লিয়ারেন্স দিলে মন্ত্রণালয় তাকে টার্মিনেট (চাকরিচ্যুত) করে। যেহেতু পিএসসি রিক্রুটিং অথরিটি সেজন্য তারা দেখে চাকরিচ্যুতির প্রক্রিয়া ঠিক আছে কি না। সবগুলো ধাপ ঠিক মতো অনুসরণ করা হয়েছে কি না। তবে সাধারণত ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এটা ঠিক থাকে। 

মন্ত্রণালয় চাকরিচ্যুত করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সেটি বিবেচনা করলে তিনি চাকরি ফিরে পেতে পারেন। শহিদুল হক বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তা চাইলে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে যেতে পারবেন। তবে এই ট্রাইব্যুনালকে এড়িয়ে তিনি সরাসরি আদালতে মামলা করতে পারবেন না। তবে যেকোনো সংক্ষুব্ধ চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা চাইলে যেকোনো সময় উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করতে পারেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। সেখানে তিনি মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করেন। এছাড়া সাকলায়েন কারণ দর্শানোর বিপরীতে যে জবাব দিয়েছেন; মন্ত্রণালয়ের কাছে সেটি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। সূত্র: বিবিসি

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow