এবার সামনে এলো আরেক করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য
অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জেরে সব করোনা টিকা প্রত্যাহার করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার সামনে এলো ভারতের বায়োটেক নির্মিত কোভ্যাক্সিনের দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইচইউ) একদল গবেষকের গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, কোভ্যাক্সিনেরও যথেষ্ট ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনটিতে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, কোভ্যাক্সিন নিয়েছেন এরকম ৯২৬ জনের ওপরে এক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশের দেহে শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে চর্মরোগ, স্ট্রোক, গিলান-বারি সিন্ড্রোম ও রক্ত জমাট বাঁধার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘অ্যাডভার্স ইভেন্ট অব স্পেশাল ইন্টারেস্ট’ বা ‘এইএসআই’ বলা হয়।
এছাড়াও নারীদের মধ্যে ঋতুস্রাবজনিত নানা জটিলতা দেখা গিয়েছে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
বিএইচইউ এর গবেষকেরা জানিয়েছেন, সমীক্ষায় ৬৩৫ জন নাবালক এবং ২৯১ জন প্রাপ্তবয়স্ক অংশ নিয়েছিলেন। ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত এই সমীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, ৩০৪ জন সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছে এমন কিশোর-কিশোরী (৪৭.৯ শতাংশ) এবং ১২৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক (৪২.৬ শতাংশ) শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন।
গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৬৩৫ জনের ৪.৭ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর মধ্যে স্নায়ুরোগ, ১০.৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর মধ্যে চর্মরোগ এবং ১০.২ শতাংশের কিশোর-কিশোরীর দেহে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা গিয়েছে। এছাড়া, ২৯১ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮.৯ শতাংশ। পেশি এবং হাড়ের সমস্যা দেখা গিয়েছে ৫.৮ শতাংশের মধ্যে এবং স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫.৫ শতাংশ।
গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে নারীদের ক্ষেত্রে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৪.৬ শতাংশ নারীর দেহে ভ্যাকসিনের প্রভাবে ঋতুস্রাবজনিত নানা সমস্যা দেখা গিয়েছে। এছাড়াও ২.৭ শতাংশ নারীর চোখের সমস্যা এবং ০.৬ শতাংশের হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা দেখা গিয়েছে। ০.৩ শতাংশের স্ট্রোক এবং ০.১ শতাংশের মধ্যে গিলান-বারি সিন্ড্রোম (জিবিএস) দেখা গিয়েছে। এটি এমনই একটি বিরল রোগ, যার প্রভাবে দেহ ধীরে ধীরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকার প্রাণঘাতী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ব্রিটিশ আদালতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নেয় প্রস্ততকারক সংস্থা। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ ওঠা অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড তৈরিতে কাজ করে ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউট।
আদালতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, কোভিশিল্ডের প্রভাবে রক্ত জমাট বাঁধা বা প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় ভুগতে পারেন মানুষ।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে দু’টি কোভ্যাক্সিন টিকা দেওয়া হয়েছিল।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন
What's Your Reaction?