চরফ্যাসন কেন্দ্রীয় খাসমহল মসজিদের উদ্বোধন

Oct 20, 2023 - 19:49
Oct 20, 2023 - 19:50
 0  117
চরফ্যাসন কেন্দ্রীয় খাসমহল মসজিদের উদ্বোধন

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাগর তীরবর্তী ভোলার চরফ্যাসন উপজেলায় উদ্বোধন হলো আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টিনন্দন পরিবেশবান্ধব মসজিদ। মসজিদটি নাম চরফ্যাসন ‘চরফ্যাশন কেন্দ্রীয় খাসমহল মসজিদ’।

আজ ২০ অক্টোবর (শুক্রবার) জুমার নামাজের পূর্বে মসজিদটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন মসজিদ নির্মাণের উদ্যোক্তা ও ভোলা-৪ (চরফ্যাসন-মনপুরা) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। মসজিদটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চরফ্যাসন উপজেলার প্রায় এক হাজার ৪০০টি মসজিদের ইমামসহ এই উপজেলার বিশিষ্ট আলেমগন উপস্থিত ছিলেন। মসজিদের জুমার নামাজের ইমামতি করেন মসজিদের খতিব মাওলানা রফিকুল ইসলাম।

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে মসজিদটি নির্মাণ কাজ চলে আসছে। মসজিদটি নির্মানে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত মসজিদটি ভূগর্ভস্থ মেঝেসহ চার তলা বিশিষ্ট। ৫৩ হাজার ২০০ বর্গফুটের এই মসজিদটিতে এক সাথে সাড়ে চার হাজার মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারবেন। আলাদা প্রবেশপথসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ৫০০জন মহিলা নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মসজিদটির ছাদে বিশাল আকৃতির কাঁচের গম্বুজ থাকায় দিনের বেলায় ভিতরে কোনো বৈদ্যুতিক আলোর প্রয়োজন হবে না। এছাড়াও মসজিদটিতে ইমাম ও মোয়াজ্জিনের থাকার ব্যবস্থাসহ এক সাথে দুই শতাধিক লোকের অযু, গোসল এবং টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

চরফ্যাসন পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ভোলা জেলা পরিষদ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের ব্যক্তিগত উদ্যোগে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির ডিজাইন করেছেন ভোলার কৃতি সন্তান বিশিষ্ঠ স্থপতি কামরুজ্জামান লিটন। ভূগর্ভস্থ মেঝেসহ চার তলা বিশিষ্ট মসজিদটির নির্মাণশৈলী সিরামিক ইটের গাঁথুনির ফাঁকে ফাঁকে নির্মল বাতাস ও  উপরে মাকড়সা আকৃতির কাঁচের গম্বজ ভেদ করে সূর্যের আলোকরশ্মি ছড়াচ্ছে মসজিদজুড়ে। ভিতর বাহিরে নান্দনিক লাইটিং আর প্রকৃতিবান্ধব নির্মাণশৈলীর ডিজাইন। মসজিদটিতে সাড়ে চার হাজার মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবে। ভূগভস্থ মেঝেতে নারী-পুরুষদের আলাদা আলাদা ওজুর ও বাথরুমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাথে উপজেলা পর্যায়ে বাংলাদেশে এই প্রথম মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ মেঝের তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

চরফ্যাসন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসান জানান, ১৭ হাজার বর্গফুট জায়গায় উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টোন চিপসের সমন্বয়ে ফেয়ার ফেস সাদা সিমেন্টের প্লাস্টার দ্বারা পরিবেশবান্ধব এই মসজিদের প্রতিটি দেয়াল আবৃত। এই প্লাস্টার ১০০ বছর স্থায়ী হবে। যাহা সম্পুর্ন প্রকৃতি বান্ধব। মূল মসজিদটি নির্মানে ব্যায় হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। চরফ্যাসন পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে দুই কোটি টাকা ব্যায়ে জ্যাকব টাওয়ার ও খাসমহল মসজিদের আশপাশে নান্দনিক সৌন্দর্য বর্ধন, ওয়াকওয়ে ও ফুলের বাগান করা হয়েছে। মসজিদটি নির্মানে গ্রীণ সার্টিফিকেট পাওয়ার বিষয়টি শতভাগ লক্ষ করা হয়েছে।

মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা মো. মামুনসহ ১০-১৫জন মুসল্লি জানান, মসজিদটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি নামাজ আদায় করতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়। মসজিদের বাইরের ও ভিতরের পরিবেশ নয়নাভিরাম। তাই স্থানীয় মুসল্লীরা এখানে নামাজ আদায় করতে বেশী আগ্রহী হয়ে ওঠছেন। পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি দেখতে দূর-দুরান্ত থেকেও অনেক লোক আসেন।  

চরফ্যাসন পৌরসভার মেয়র মো. মোরশেদ জানান, মসজিদটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে এতে দিনের বেলায় কোনো বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো লাগবে না। সূর্যের আলো সরাসরি প্রতিটি ফ্লোরে প্রবেশ করে। তিন দিকের দেয়ালের সিরামিক ইটের গাঁথুনী এমনভাবে ফাঁকা রাখা হয়েছে এতে করে সার্বক্ষনিক তাপমাত্রা সহনীয় থাকবে এবং বৈদ্যুতিক পাখা ছাড়া অন্য কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে না। এতে বিদ্যুতের ব্যবহারও কম হবে। এ কারনেই মসজিদটি পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত। মসজিদটি চরফ্যাসন পৌরসভার ব্যবস্থপনায় থাকবে। মসজিদটির পাশে নির্মিত সুউচ্চ জ্যাকব টাওয়ারের ২৫ শতাংশ আয় মসজিদ পরিচালনায় খরচ করা হবে।  

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোক্তা ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব জানান, আমি বিগত ১৫ বছর ধরে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন, অনুন্নত ও অবহেলিত উপকূলীয় চরফ্যাসনকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উন্নত শহরে রূপান্তর করার জন্য চেষ্ট করে যাচ্ছি। আমি এ এলাকার মানুষকে একটি কথা বলেছি যে, আমি হয়তো এ এলাকাকে রাজধানী করতে পারবো না। তবে এমন উন্নয়ন করবো যাতে করে রাজধানীর মানুষ এ এলাকা দেখতে আসে। আমি সেটি করে দেখিয়েছি। আজকে সারা দেশ থেকে পর্যটক চরফ্যাসনকে দেখতে আসে। আমার সকল উন্নয়নের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ উন্নয়ন হলো এ কেন্দ্রীয় খাসমহল মসজিদ। আমার জীবনের স্বপ্ন ছিল একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণের। আজ আমার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ায় মহান আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া আদায় করছি। আশা করি এখানে এসে মানুষের মন জুড়িয়ে যাবে। মুসল্লীরা স্বাচ্ছন্দে নামাজ আদায় করতে পারবে। এ মসজিদ বাংলাদেশের প্রথম পরিবেশবান্ধব ও একমাত্র কাচের গম্বুজ বিশিষ্ঠ মসজিদ বলে দাবি করেন তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদিন আখন, পৌরসভার মেয়র মো. মোরশেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ভিপি, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনির আহমেদ শুভ্র, চরফ্যাসন উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও মসজিদ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. সালেক মূহিদ, ইত্তেহাদুল ওলামাইল মাদারিসের ভোলা জেলার সভাপতি মাওলানা আনাস প্রমূখ।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow